সমানুপাতিক – সুশান্ত

সমানুপাতিক - সুশান্ত Meghpori

পুকুরপাড় দিয়ে কয়েকজন উৎপাত ছেলের দল আসছিল। স্কুল থেকে আসার পথে নিখিল ও তার দুই বান্ধবী আম গাছের নীচে বসে পড়ল বিশ্রামের জন্য। মেইন রোড দিয়ে গেলেও তারা বেশিরভাগ মাঠের পথ দিয়েই স্কুল থেকে ফিরত। এক পাড়ায় থাকে বলেই তাদের ঘনিষ্ঠতা বেশি।

তখনি রুমা ওই ছেলেদের দলকে ইঙ্গিত করে বলল “ওই আদিত্যতটার খুব অ্যাটিটিউড, একটুও ভালো লাগেনা ওকে।” আদিত্য ওই দলের মধ্যেই একজন, তাদেরই ক্লাসমেট।
চন্দ্রিমা কিছুটা বিষন্নভাব দেখিয়ে প্রতুত্তরে নিখিলের দিকে তাকিয়ে বলল “ও ওরকমই তাই না, তাছাড়া ওর অ্যাটিটিউড ওকে ঠিকই মানায়।”
রুমার কথাটা যে চন্দ্রিমাকে ভালো লাগেনি সেটা নিখিলের কাছে স্পট হয়ে গিয়েছিল।
নিখিল মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালেও চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ ভাব আর সেটা চন্দ্রিমা বুঝতে পারত যদি নিখিলের দিকে একটু খেয়াল রাখত। আসলে আদিত্যকে নিখিলেরও ভালো লাগতো না। নিখিল অন্য গল্প করে ব্যাপারটাকে সামলাতে চাইছিল।

তার মাথায় একটাই খটকা লেগেছিল, যে মেয়েটি কিনা একসময় বলেছিল যে আদিত্য একটা বাজে ছেলে, সে নাকি আজ ওর সায়ে কথা বলে।
নিখিলের ভাবনাতে খুব একটা শক্তি ছিল না, তাই সে সেটা তখন তার মাথায় খেলেনি যেটা আপনারা এতক্ষনে বুঝে গেছেন। তাই সে তেমন সাত-পাঁচ না ভেবে চুপ করে রইল।
চন্দ্রিমার প্রতি তার দুর্বলতা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
বলেনি কোনোদিন ওকে। কিন্তু আজ সে চন্দ্রিমার প্রতি কিছুটা ঈর্ষান্বিত।
প্রত্যেকদিনের মতোই সেদিনও স্কুল থেকে ফিরছিল তারা।
চন্দ্রিমা-“কিরে,আজ কিছু কথা নেই যে তোর?
অন্য দিন তো কথা বলার সুযোগই দিস না।”
“এমনি”- ভাঙ্গা গলায় উত্তর নিখিলের।
“কথা বলার জন্য বাঁচিয়ে আর রাখলি কোথা?”- রুমা মুখ ফস্কে বললেও, সে যে মজার ছলে বলেছে তার প্রমানহিসেবে একটা টান রাখতে চাইল।
চন্দ্রিমা- “আমি! আমি আবার কি করলাম”
নিখিল কিছুটা বিরক্তির সাথে রুমাকে বলল-“কিসব যে ফালতু বকিস,তোকে এত কথা বলতে বলা হয়েছে।”
একটু নীরবতা, এই গল্পের গন্তব্য বিষয় টা যে কি সেটা তাদের কাছে পরিষ্কার।
চন্দ্রিমা – “ও আদিত্যর কথা, ওটার ব্যাপারে বলবো ভাবছিলাম, ভুলেই গেছি, তোদের ছাড়া আর কাদের বলি বল। ও আমাকে অনেক সাহায্য করেছে।”
রুমা – “আর নিখিল, এর কথা এক বারও ভাবলি না।”
চন্দ্রিমা – “আরে তোরা তো সবসময় পাশেই আছিস,তাছাড়া সবার সাথে তো সম্পর্কে আসা যায় না। আর তোর কি মনে হয়, সম্পর্কে আসাটাই ভালোবাসা?”
রুমা – “থাক, বুদ্ধি দিতে হবে না, এরা সবকিছু এত্ত সহজ করে বলে না! বুঝলি তো নিখিল, আশা মানুষের বিভ্রমকে আঁকড়ে ধরে রাখে যা একধরনের বোকামি, আর আমি চাই তুই অন্তত এটা থেকে বেঁচে থাকিস”।
নিখিল কিছু না বললেও ভেতরের কথাগুলো তার মাথায় ঝড়ের গতিতে ঘুরপাক খাচ্ছে।
নিখিলের এই নিস্তব্ধতা হয়তো অনেক কিছুই বোঝাতে পেরেছে চন্দ্রিমাকে।
নৈঃশব্দ্যের ভাষার চেয়ে গভীরতম ভাষা আর কি হতে পারে।

সে জানে প্রত্যেকটা কষ্টের দিনের মত এই দিনগুলোও কেটে যাবে। তবুও চন্দ্রিমা, নিখিলের মনের কোনো একটা কোনে এখনও আটকে রয়েগেছে। সে মনে মনে ভাবে তাদের বিচ্ছেদ হলেই সে চন্দ্রিমাকে তার মনের কথা বলবে। আদিত্যকে চন্দ্রিমার পাশাপাশি দেখলেই তার গা জ্বলে যায়।
তার মাথায় চলতে থাকে প্যাঁচ পাকানো চিন্তাধারা, চন্দ্রিমার সাথে কাটানো কতো কাটাকুটি স্মৃতি, মনে পড়ে কত শুরু করা চিঠি অর্ধেক লিখে ছিঁড়ে ফেলেদিয়েছে। চন্দ্রিমাকে দেওয়ার মত একটাও চিঠি পুরো লিখতে পারেনি।
এখন সে বুঝেগেছে আর কোনো রকমেই চন্দ্রিমাকে পাওয়া সম্ভব নয়, তবু তাকে পাওয়ার আশাটা কোথাও রয়ে গেছে।

আসলে প্রেম এরকমই…
তাকে না পাওয়ার সর্বাধিক সম্ভাবনা, তাকে চাওয়ার সাথে সমানুপাতিক।
সে যত যত নাগালের বাইরে যেতে থাকবে, আপনার তাকে চাওয়ার ইচ্ছা ততটাই বাড়বে।

Please rate this Post

5/5 (4)
  • এইভাবেই আরো ভালো ভালো লেখা উপহার দিতে থেকো… 💞

    Gobinda Gorai April 6, 2023 11:11 pm Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *