আলাপ – সুশান্ত

আলাপ - সুশান্ত Meghpori

বাড়ি ফেরার পথে বন্ধুকে বললাম আজকে এই রাস্তা দিয়ে যাবো না। সাইকেল টা ডানদিকে না ঘুরিয়ে মেইন রোড কেটে সোজা পেরিয়ে এলাম এবং হালকা ব্রেক দিয়ে রাস্তার দুদিকের বাড়িগুলোর ছাদ ও চারিপাশে তাকাতে লাগলাম।একটু পর নিরাশায় শেষ বারের মত পিছন ফিরে প্যাডেলের স্পীড বাড়িয়ে দিলাম সেই আন্দাজ করা বাড়ির সামনে থেকে। ব্লক এর কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলাম,মনে পড়েগেলো মেয়েটিকে।

এবারে তার বর্ণনার একটা দাবি আপনারা রাখতেই পারেন। না.., ঠিক মনে পড়ে না এখন তার চেহারা, এটা নিশ্চিত যে সুন্দর ছিল। ছয় টা বছর পার হয়ে গেছে।জানিনা কেনো তার একটা ছাপ রয়ে গেছে মনে। স্লিভলেস টপ আর জিন্স পরেছিল সেদিন (পোশাকের নামটা বন্ধুদের জিজ্ঞেস করলাম, মেয়েদের পোশাক এর ব্যাপারে তেমন কিছুই আইডিয়া নেই আমার)। আর চশমাটা যেন তার জন্যই বানানো হয়েছিল, মানাচ্ছিল দারুন এইটুকু বলতেই পারি।

সেটা ছিল ২০১৭ সাল, সকাল ৭তে নাগাদ লালপুর মোড় থেকে ঝুমুর(বাস)ধরে বেরিয়ে গেছিলাম দুর্গাপুর, evets এর পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। মোটামুটি 9 টা নাগাদ ঢুকে ছিলাম B.C. Roy এ। আমার সিট ছিল ডানদিকের সারির একদম প্রথম বেঞ্চের বামদিকে আর ও বসেছিল সেই সারির দ্বিতীয় বেঞ্চের ডানদিকে। কিছু উত্তর লেখার পর সাহায্য পাওয়ার আশায় এদিক ওদিক তাকাচ্ছি তখনই চোখ আটকে গেছিল একটা চোখে। দেখছি একটা মেয়ে আমার দিক পাস কাটিয়ে বেঞ্চে মাথা ঠেকিয়ে আছে, সে যে পরীক্ষার টেনশনে আছে, তার মুখমণ্ডল দেখলেই তার ছাপ লক্ষ্য করা যায়। কখন থেকে যে মাথা না নড়িয়ে এদিকে তাকিয়েছে তার খেয়ালই নেই আমার। যদিও ক্রিয়া এখন ঝাপসা হয়ে গেছে, সেই চোখের চাহনির অনুভূতি এখনও সতেজ। বারবার তাকাচ্ছিলাম, সেও তাকাচ্ছিল।

পরীক্ষার বাকি সময়টা সেই প্রক্রিয়া অনবরত চলছিল। পরীক্ষা শেষে বেরোলাম, অটো ধরে সিটি সেন্টার আসছি। তখনও মেয়েটিকে মনে পড়ছে, কতো আকাশ-পাতাল ভাবনা। তাহলে কি আমার জীবনে মেয়েটার চরিত্র অভিনয়ের পালা শেষ, মাত্র দুই ঘণ্টার জন্য এসেছিল। সিটি সেন্টারে এসে দেখি বাসে প্রচন্ড ভিড়, ওঠা প্রায় অসাধ্য হয়ে গেছিল, পা রাখার পর্যন্ত জায়গা হচ্ছিল না। অবশেষে বাঁকুড়ায় বাস দাড়াল, সিট পেলাম, বাসটিতে অনেকটা জায়গায় ফাঁকা হয়েগেছে।চা নাস্তা করে বাসে উঠে সিটে বসতে গিয়ে দেখি আমার সিটের বিপরীতে একটা মেয়ে, চোখগুলো কেমন যেন চেনা চেনা লাগল।

আমি কিছু বলতেই সে বলল “তুমিই ছিলে তো পরীক্ষার ওখানে?” আমি হ্যাঁ উত্তর দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম “পরীক্ষা কেমন হলো?”

“দেখছিলে তো, শুধু শুধু বসেছিলাম” বলে পাল্টা প্রশ্ন করলো “তোমার?”
মনেমনে বললাম তোমাকেই তো দেখছিলাম, হয়তো সে বুঝতেও পেরেছিল কি ভাবছি আমি। আর তখন যে কীভাবে তাকিয়ে ছিলাম, বুঝবেই বা না কেন। কে জানে মেয়েটির সাথে আবার দেখা হয়ে যাবে।
“তোমার মতোই, দেখছিলে তো আমাকে”।
“কোথায় বাড়ি তোমার?”
জবাবে বললাম লালপুরে, জানো? হুড়া থানায়।
“লালপুর! প্রোপার লালপুরেই? দেখিনি তো কোনদিন”।
আমি -“না, মানে লালপুর থেকে 5 কিমির মতো, লেদাডি।”
“ও”… সে ব্যাগ থেকে আমের mango জুস বোতল বার করলো।
“আচ্ছা তুমি কোথায় থাকো?”
ঢোক গিলে বাঁকুড়ার কোনো এক জায়গার নাম বলল। এখন সেটা ভুলে গিয়েছি আমি, কালি মন্দির পাড়া বা এমনই কিছু একটা নাম বলেছিল।
সেখানে মামাবাড়ি তার,আর নিজের বাড়ি হুড়াতে, মামাবাড়িতেই নাকি থাকে ছোটোবেলা থেকে।
“কি!” অবাক হয়ে বললাম,”তোমার বাড়িও হুড়াতে?”
“আমিও তো দেখিনি তোমাকে?”
সে -“মামাবাড়িতেই থাকি।”
“কি করো এখন?” আমার দিকে তাকিয়ে বলল।
“B.sc. 1st year”আমি বললাম।
আমি প্রশ্ন করার আগেই বলল “আমি 2nd year এ।”
ইস! কি ভুল করে ফেললাম, নিজের মনে মনে ভাবলাম।আসলে আমি ওকে মিথ্যে বলেছিলাম, আমি 2nd year এই পড়তাম তখন। আমি ভেবে রেখেছিলাম সে হয়তো সবেমাত্র উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছে। ওর চেহারা টাই ওরকম ছিল, বাচ্চা বাচ্চা ভাব।
বয়সের সামনঞ্জস্য রাখতে গিয়ে মিথ্যে বলে কি না ভুল করে ফেলেছিলাম। এখন যদিও আর সেটা ভুল মনে হয় না।

আচ্ছা নামটা বলা বাকি এখনও, তাই না ?
নাম..টা…. বলতে পারছি না, মাফ করবেন।
না না ভুল ভাববেন না, নামটা আসলে মনেই নেই।
গল্প করে করে কখন যে বাসটা হুড়াতে পৌঁছে গেছে…।
এবার তার নামার পালা, তখন বাজে ৮.৩০। বাস এগিয়ে গেলো, তার ছায়ার শেষটা হারিয়ে গেলো বামদিকের গলিতে।
অনেকটা বছর পেরিয়ে গেছে, ছয় টা বছর কম নয় কিন্তু। কতবার পেরিয়েছি সেই গলি দিয়ে, কতবার তাকিয়েছে সেই গলির আসে পাশে, ছাদগুলোতে।
কত খোঁজ নিয়েছি, facebook এ insta তে।

অবশেষে একটা বন্ধুকে জিজ্ঞেস করে অনেকটাই জানতে পেরেছিলাম,তার বাড়ির এলাকায় অনেকদিন রাজমিস্ত্রির কাজ করেছিল সে, আমার বর্ণনার হিসেবে সে নাকি তাদের (মেয়েটার) বাড়ির কাজও করেছিল অনেকদিন কিন্তু নাম টা তার কাছেও জানতে পারিনি।
মাঝে মাঝে হাসি পায় আমার, কত বন্ধু কত বান্ধবি ছিল যাদের সাথে ৫-৬ বছর কাটিয়েছি তাদের তো ভুলেই গেছি,হয়তো শত চেষ্টার পরে মনে আসে।আর এদিকে একটা মেয়ের সাথে ৫ ঘণ্টার কম সময় কাটিয়েও তার সাথে কাটানো প্রত্যেকটা মুহূর্ত যেন এখনো তাজা ও খুব দামি মনে হয়,মনে আছে তার প্রত্যেকটা কথা। শুধু তার নাম না জানার আক্ষেপটা রয়েই গেল আজ।
হয়তো বা এই কারণে লেখাটা পড়তে পারছেন।
আমার কাছে তো কত প্রিয়জন, কই তাদেরকে তো কলমের ডগায় রাখতে পারলাম না।

Please rate this Post

5/5 (1)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *