প্রিয়তমা রাই (পঞ্চম চিঠি) – ইশান

Priyotoma-Rai-Pancham-Chithi-Ishaan-Meghpori-Bangla

ভালো আছো রাই, ?!
নাহ.. পারিনি আমি..
হাজার চেষ্টা করেছি তোমার থেকে দূরে থাকার, তোমাকে ভুলে থাকার, ভালো থাকার.., কিন্তু.. ব্যস্ পারিনি..
আর তাই হয়তো দীর্ঘ পাঁচ বছর পর যেগলিতে পথ হারাই বারবার, আবার সেখানেই নিজেকে খুঁজে পেলাম হঠাৎ।
যে ঠিকানায় না আসতে চাইলেও, বারবার হোঁচট খেয়ে চোখ খুললে নিজেকে সেখানেই আবিষ্কার করি।

তুমি, আমি, আমাদের এই একতরফা চিঠি আর আমাদের এই একতরফা ভালোবাসা। আবার একটা বসন্ত তোমায় ছাড়া.. রাই.!!
আবারো আমি তোমার আবির মাখা মায়াবী মুখখানা দেখবো বলে, কুঁচকানো পাঞ্জাবিতে তোমার বাড়ির সামনের খবরের কাগজের দোকানটা থেকে একটা আনন্দবাজার কিনি।

ছোট গোল্ড ফ্লেকের ধোঁয়া আর খবরের কাগজে, ধর্মতলায় চাকরিপ্রার্থীদের ধর্মঘটের মত খবরে.. জায়গাটায় মনখারাপের মেঘ বাঁধে ধীরে ধীরে।
সেটা কেটে যায় তোমার গালে আবিরা ঠোঁটে হাসি দেখে। মুহূর্তের গতিবেগ কমে, চারপাশের দৃশ্যগুলো রং আরও উজ্জ্বল হয়ে যায়। প্রজাপতিটা খুব আস্তে করে ডানা মেলে, তুমি তুমি স্লো-মোশানে হাত দিয়ে আবির আটকাও।

হঠাৎই চোখে পড়ে তোমার কপালে সিঁদুর..!!, হিংসের চশমার কাছে সেটা তুলনামূলকভাবে একটু ফ্যাকাসে লাগে।

নাহ্.. মজা করছি। তুমি তোমার সংসার প্রেমী স্বামী, যার নাম অবিনাশ মজুমদার গোছের কিছু একটা হবে, তোমার দুই বছরের মিষ্টি মেয়ে যার নাম জানিনা..!! আমি হলে হয়তো “মুস্কান” রাখতাম, এদের নিয়ে তোমার ছোট্ট সংসারে ভীষণ সুখেই আছো..।।
আমিও তো সেটাই চেয়েছি সবদিন, রাই.!!
আমার সংসার সম্পর্কে উদাসীন-যাযাবর-বাউন্ডুলে স্বভাব নিয়ে, কাউকে ভালোবাসা ভীষণভাবে সম্ভব.., কিন্তু কাউকে যে আদৌ ভালো রাখা সম্ভব কিনা ?!, সেটা নিয়ে আমি দ্বিধায় থেকেছি সবদিন। তাই তো তোমাকে দূর থেকে ভালবেসে গেছি, কাছে এসে তোমায় কিছু বলার সাহস হয়নি। ভয় পেতাম জানোতো, তোমায় কষ্ট দিতে চাইনি কোনোদিন। তাই লুকিয়ে ভালোবেসেছি তোমায়। এখনো বাসি, তোমাকে না জানিয়ে!!

তোমার হলুদ শাড়ি, গালে আবির, চোখে সানগ্লাস পরা হাসিখুশি মায়াবী মুখটা দেখে বড় শান্তি লাগে। ভাবি.. একটা জীবন অনেক ছোটো, তার চেয়ে বরং এই জনমে ভালো লাগুক, পরেরটাই তোমায় জানাবো, তারপরেরটাই প্রেম আর তারপর বিয়ে.. সান্তনা দিই নিজেকে.!!

খবরের কাগজটা বগলদাবা করে বাড়ির দিকে রওনা দিই। শালপাতা মাড়িয়ে নিজের আস্তানায় ফিরে, একটা সিগারেট জ্বালায়। শুন্য চোখে দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে ভাবার চেষ্টা করি, তুমি আমার হলে আসলেই কি ভালো হতো ?? হয়তো তুমি আমার হলে তোমাকে এতটা ভালবাসতে পারতাম না.., হয়তো তুমি আমার নও বলেই তোমাকে এতটা নিজের ভাবতে ইচ্ছে করে।
ভাবি যে, কিছু প্রেম হয়তো অসমাপ্তই সুন্দর হয়। ভালো থেকো রাই, নিজের খেয়াল রেখো.!!
তোমার অস্তিত্বের ভাবনাতেই আমি নিজেকে ভালো রেখে নেব। আজ উঠি তবে..

“ফেরার রাস্তা বন্ধ তোমার, শুকিয়েছে ফুল হাতে 🥀
কাঁটাতার যত দিয়েছে পাহারা, আত্মঘাতী রাতে।
শত বছরের শত অভিনয়.. হৃদয় ছিন্ন রক্তক্ষয়,
সমান্তরাল মহাবিশ্বে, থাকবো হয়তো সাথে..🖤”

Please rate this Post

5/5 (2)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *