একাত্তর – অনিমেষ রায়

একাত্তর - অনিমেষ রায় Meghpori

৭১‘ একাত্তর – অনিমেষ রায়

০ আর ৭১-এর মধ্যে পার্থক্য ১ নয়,পার্থক্যটা ১০২৪ টা দিনের, ৫৩ টা ইনিংস-এর আর অনেক কাছের-দূরের মানুষের…

সবার প্রথমেই বলে রাখি, আমি এই ধরনের কোনো ম্যাগাজিন বা পত্রিকা তে কোথাও কোনো ভাবে নিয়মিত লিখতে অভ্যস্ত নই, তাই সব রকম ভালো লাগা, খারাপ লাগা কে দয়া করে মাপ করিবেন পাঠক বন্ধুরা 🙂।

আশাকরি শিরোনাম দেখেই হয়তো আপনারা বুঝতে পেরেছেন আজ আমি কি নিয়ে লিখছি, এটা আসলে কোনও লেখা নয়,শুধুমাত্র আপনাদের সাথে একটা মনের অনুভূতি নিয়ে গল্প বলা 😊।। চলুন তাহলে শুরু করা যাক নাকি !??…

ক্রিকেট একটা আমার ভালো লাগা বলতে পারেন। হয়তো ক্রিকেট খেলতে ভালো পারি না, কিন্তু ক্রিকেট দেখতে বড়ো ভালো লাগে। ক্রিকেট মাঠে হয়তো বেশিরভাগের থেকে খারাপই খেলি, কিন্তু ক্রিকেট দেখাতে অনেককেই টেক্কা দেবো🥰। বর্তমান দিনের সাবস্ক্রিপশন যুগে হয়তো সব খেলার লাইভ টেলিকাস্ট দেখতে পারি না, কিন্তু ক্রিকবাজ-এর দৌলতে (CricBuzz) প্রায় সব দেশের ছোট বড় সব খেলার কমেন্ট্রি গুলো পড়ে শেষ করি 😂। একবিংশ শতাব্দী তে জন্ম নেয়া আমার মত ক্রিকেট ফ্যান হয়তো অনেক ভালো ভালো লেজেন্ড ক্রিকেটার এর খেলাই মিস করেছি ঠিকই কিন্তু তারপরেও আমরা পেয়েছি বিরাট কোহলি, বাবর আজম, স্টিভ স্মিথ, রুট, উইলিয়ামসন, ধোনি, কামিন্স, স্টার্ক দের মত লিজেন্ডারি প্লেয়ারদের 😇। হ্যাঁ আমি হয়তো অন্যদের মত কোনো নির্দিষ্ট ক্রিকেটারের একদম অন্ধ ভক্ত হয়ে উঠতে পারিনি। কিন্ত ক্রিকেট এর ফ্যান হিসাবে এদের অনেকেরই খেলা ভালো লাগতো।। আর তারমধ্যেই কিং কোহলি 😁।।

কিন্তু আমিও সেই অল্প জানা বা বেশি জানা অন্যান্য নেট নাগরিকদের মত তার অনেক সিদ্ধান্ত, ক্যাপ্টেন্সি এরও বিরোধিতা করার দু সাহস দেখিয়েছি 🤢। সে ৩৬ অল আউট এর পর তার অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে আসা হোক বা কুম্বলে বিতর্ক, যাই হোক সে গুলো সবই ছিলো দলের ভিতরের ব্যাপার বা ব্যক্তিগত কারণ, কিন্তু তারপরেও মাঠের বাইরে থেকে এগুলো দেখতে অনেকের মত আমারও খারাপ লাগতো 🙂।। যাই হোক….এই গুলোর পরেও তার প্রত্যেকটি সেঞ্চুরি, ম্যাচ উইনিং ইনিংস, বিদেশের মাটিতে সিরিজ জয় তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেছি আমি।আমিও তার অন্ধ ফ্যানদের মত একটা সময় ভেবেছিলাম সচিনের ১০০ শতরানের রেকর্ড আর বেশি দূর নয় 😅।।

কিন্তু না..

আমিও তাদের মতোই চাতক পাখির মত প্রায় ১০২৪ টা দিন, ৫৩ টা ইনিংস ধরে চেয়ে থেকেছি স্কোরবোর্ড এর দিকে। চোখের সামনে সব ফরমাটের এভারেজ ৫০ থেকে কমতে নামতে দেখলাম। অনেক জনের কাছেই শুনেছিলাম তিনি নাকি আর ফিরবেন না, হাসিম আমলাদের মত তার গল্পও নাকি শেষ হতে চলেছে, অনেকের হোয়াট্সআপ, ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রাম-এ দেখতে লাগলাম “Every fairy tales has a tragic End” ধরনের লাইন গুলো।। তার সমালোচক – ফ্যান দের মত আমিও বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম তিনি আর হয়তো সত্যিই ফিরবেন না।। আমিও চেয়েছিলাম হয়তো তিনি ঘরোয়া ক্রিকেট এ ফিরে গিয়ে আত্মবিশ্বাস নিয়ে ফিরুক এবং নতুনদের সুযোগ দেয়া হোক।। কিন্ত হ্যাঁ অবশ্যই খারাপ লাগতো একটা ভালো শেষের জন্যে, চাইতাম এই রূপকথার গল্পটা যেনো কোনো ভাবেই Tragic ভাবে শেষ না হয়, ভালো কিছুর শেষ তো ভালো ভাবেই হওয়া দরকার তাই না..? 🙂

তাই হয়তো ওই দলের ভিতরের বিজ্ঞ লোকেরা, কোচিং স্টাফরা, দলের ক্যাপ্টেন যারা ওকে প্রতিদিন কাছ থেকে দেখছে তারা ঠিক ভরসা রেখে গিয়েছিলেন 😌, তাই হয়তো অধিনায়কত্ব ছাড়া বা ছড়ানো সব কিছুকে টপকে তিনি আবার ফিরে এলেন 🥳।।

দিনটা ৮ই সেপ্টেম্বর, সন্ধ্যা ৭:০০ টা থেকে খেলা শুরু হলো, এশিয়া কাপ-এর সুপার ৪ এর ম্যাচ। এর আগের দুটি ম্যাচে ভারত পাকিস্তান আর শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে আগেই বিদায় নিয়েছে টুর্নামেন্ট থেকে।তাই এই ম্যাচটা ছিলো নিছকই নিয়ম রক্ষার ম্যাচ – আফগানিস্থান, ভারত দুজনের কাছেই। টস-এর সময় দেখা গেলো দলের নিয়মিত ক্যাপ্টেন রোহিত শর্মা আজ বিশ্রাম নিয়েছেন, তাই লোকেশ রাহুল ক্যাপ্টেন্সি করবে, আর তিনি এবং কিং কোহলি আজ ওপেনিং করবে।। ভারত প্রথম ব্যাট করবে। নিয়ম রক্ষার ম্যাচ বলে সেইদিন হোস্টেলের টিভিতে সবাই মিলে আর খেলা দেখতে বসে নি।।

কিন্তু একজন ক্রিকেট পোকা হয়ে এই ম্যাচটাও দেখতে ছাড়িনি আমি 🙂।। মোবাইল এ খেলা দেখতে শুরু করলাম,অনেক বন্ধুরা বলতে লাগলো এই ম্যাচটা দেখে কি করবি! আমি হটাৎ করেই অন্যান্য দিনের মতো বলে ফেলেছিলাম আজ কোহলি সেঞ্চুরি করবে দেখ 😅।। মুখের কথা লেগেও গেলো 😇।। ম্যাচের বয়স যখন ১৮.২ ওভার, তখনই যেনো শাপমুক্তি ঘটলো, হোস্টেলের টিভি চলতে শুরু করলো, ঘরে ঘরে হৈ পড়তে লাগলো, ভারত পাকিস্তান ম্যাচের জন্য কিনে পড়ে থাকা বোম গুলো ফাটতে লাগলো, সে যেনো বিশ্বকাপ জেতার অনুভূতি, ৭ বার জিতে ফেলা এশিয়া কাপ জিতলেও যেনো এই আনন্দ টা হতো না.., স্টেটাস,  ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম-এ দেখতে লাগলাম “King is Back“… ICC এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের কভারফটো হলো সেই হেলমেট খুলে ব্যাট তুলে ধরার মুহূর্ত টা..।। হ্যাঁ এটাই হলো আমাদের কিং কোহলি, এটা যেনো একটা আবেগ, তাই হয়তো সেইদিন অনেক সমালোচক-এর চোখের কোণা তেও আনন্দশ্রু এসে জমেছিল।।

কিং কোহলির এই ৭১ তম সেঞ্চুরি টা যেনো সেইদিন বলে গেলো – “খারাপ সময় টা কেটে যাবে“।

যাইহোক এখন ক্রিকেট ঈশ্বরের কাছে একটাই প্রার্থনা সামনের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এ ভারত ভালো ফল করুক, কিং কোহলির ব্যাট থেকে আবারো এইরকম ইনিংস বেরিয়ে আসুক।।

আসলে যতই হোক, ভারতীয় উপমহাদেশে আমার মত কোটি কোটি ভক্ত এইরকম ইনিংস থেকেই যে জীবনের মাঠে “ফিরে আসার” মন্ত্র খুঁজে পায় 😌…

একাত্তর - অনিমেষ রায় Meghpori
ছবি: কিং কোহলির একাত্তর নম্বর শতক, “একটি নতুন শুরু”

Please rate this Post

5/5 (2)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *