ইতি, স্মৃতিতে বাইশ – অনির্বান দাস

ইতি, স্মৃতিতে বাইশ - অনির্বান দাস Meghpori

ইতি,
স্মৃতিতে বাইশ

প্রিয়, বাইশ
তোকে নিয়ে কথা বলা বা লেখা কোনাটাই হয়নি সেভাবে, কিন্তু তুই আমার হৃদয় আর স্মৃতির খাতায় রয়েছিস অনেকটা জুড়ে। তাই তোর স্মৃতি’তে আমার চোখে তোকে যতটা দেখেছি, তাই নিয়েই তোকে লেখা আমার প্রথম এবং শেষ চিঠি।

তোর শুরু থেকে শেষ পর্যন্তটা ছিলো অনেকটা ব্যাস্ত কলকাতার ঘিঞ্জি গলিগুলোর মতো ঘটনাবহুল।
মনে পড়ে? তুই তখন এঁকেবেঁকে কোনরকমে করোনা মহামারী কে কাটিয়ে হাঁফ ছাড়ছিস। আর কলেজগুলো খুলবে খুলবে করছে, যথারীতি সময় এলো কলেজ যাবার। শীতের শেষে ফেব্রুয়রীতে কলেজ ঢুকছি যখন, তখন অনেক কিছুই মাথায় ঘুরছিলো, এটা করবো ওটা করবো এই বয়সে যা হয় আরকি! তবে শেষমেশ অনেক কিছুই হয়নি কিন্তু খালি হাতে ফেরাসনি তুই আমায়, অনলাইনে যাদের সাথে দিনরাত গুগুলমিটে আড্ডা মেরেছি দেখা হয়েছে তাদের সবার সাথে, আরো কাছ থেকে চিনেছি জেনেছি তাদের। কলেজের সিনিয়রদের কাছে বকুনি খাওয়া থেকে শুরু করে তাদের সাথেই একসঙ্গে থেকে প্রোগ্রামের আয়োজন করা অনেকটা পথই পেরিয়েছি এই তোর সঙ্গেই।
যাইহোক এই শুরুর পরও ভাবিনি আরো অনেক কিছু তোর দেবার আছে আমায়।

অনলাইনে দ্বিতীয় বর্ষের এন্ড সেমিস্টার পরীক্ষা দেবার পর সুযোগ হল হস্টেলে থাকার, যা আমার কাছে এখনো অবধি আমার ছোট্ট এই জীবনে কাটানো অধ্যায়গুলোর মধ্যে থেকে সেরা অধ্যায়, যার এখনো কিছু বছর বাকি কলেজ জীবন শেষ হতে। এখানে এসে তুই আমাকে দিয়েছিস আমার বন্ধুর থেকেও বেশি ভাইয়েদের, যারা সুযোগ পেলে দাদাদের মতো শাসন করা থেকে শুরু করে বাচ্চাদের মতো হৈ-হুল্লোড় করা সবই করে অনায়াসে। অনেকটা শিখেছি ওদের থেকে আবার ওদেরকে বোঝার চেষ্টাও করেছি অনেক সময় । কখনো আবার অনেককেই নিজের কষ্ট ভুলে অন্যকে সান্ত্বনা দিতে দেখেছি, বিচ্ছেদের আগুনে বা একতরফা প্রেমে পাগল হয়ে মদের নেশায় টলতে দেখেছি তো আবার পড়াশোনায় রাতজাগা টপারদের কালো হয়ে বসে যাওয়া চোখ দেখেছি। নিজের বদলে যাওয়াও দেখেছি!

পুজোর সময় ভেবেছিলাম কিইবা নতুন হবে এবার, প্রত্যেক বছর যেভাবে ঘুমিয়ে থাকি মা অষ্টমির অঞ্জলি দিয়ে প্রসাদ নিয়ে আসলে ঘুম ভাঙে। সেখানেও তুই নতুন অধ্যায় লিখে রেখে ছিলি, শুধু কি আমার জন্যই? দেখা হয়েছিল পুরনো সব স্কুলের বন্ধুদের সাথে, হঠাৎ করেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ক্রিয়েট আর পুজোয় বেরোনোর প্ল্যান তৈরি। যে ছেলেটার সাথে কিছু বছর আগে ঝগড়ার কারনে ব্লক করেছিলাম যাকে,সেই তাকেও পেয়েছিলাম একই গ্রুপে তাই অগত্যা সবভুলে আনব্লক। ঘুরতে বেরিয়ে কিভাবে তার সাথে কথা শুরু করা যায় সেই ভাবতে ভাবতেই সেই প্রথম কথাবলার সুযোগ করে দিয়েছিল। ঘুরেছিলাম মজা করেছিলাম অনেকটাই। রাত শেষে বাড়ি ফিরে ক্লান্ত শরীরও সেদিন ফুরফুরে মনে হচ্ছিল।

পুজো শেষ; পরীক্ষা চলে এলো কোনরকমে পাশ করার জন্য ব্যাস্ত তখন সবাই। সারা বছর না পড়ে সেমিস্টার পরীক্ষার আগে অনুভব করেছি ইঞ্জিনিয়ারিং এর চাপ যা অস্বস্তিকরের পাশাপাশি একটা স্বস্তির অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আর পাশ করার জন্য টুকলি বানানো থেকে শুরু করে তা লুকিয়ে রাখার কায়দা সবই দেখেছি শিখেছি হস্টেলেই। আর এই পরীক্ষার আগেই সময় কাটাতে বন্ধুদের সাথে একুশজনের সেই পরেশনাথ ট্রিপের কথা ভুলবোনা কখনোই সে’কিসব মুহুর্ত উপহার দিয়েছিলি তুই!

পরীক্ষা শেষ হয়েছিল কোনরকমে, মেজাজ ঠিক করতে তাই আবার ঘুরতে যাবার প্ল্যান নিয়ে বসা হলো হঠাৎ একদিনে ঠিক হলো বোলপুর শান্তিনিকেতন ঘোরার, সেখানেও কম মজা হয়নি! শান্তিনিকেতনের গাছের ছায়ায় ঢাকা ভোররাতের রাস্তায় আমরা হেঁটেছি দেখেছি সূর্যোদয় যা সোনাঝুরির মেলায় গিয়ে অস্তে গিয়েছে।

মোটমিলিয়ে অনেক কিছুই পেয়েছি তোর থেকে। যা হিসেব করতে বসলে শেষ হবেনা, তাই বাদ গেছে হয়ত অনেক কিছুই তারা নাহয় ফুল হয়ে ফুটুক অন্য গল্পের আঙিনায়।

তুই এখন শেষের মাথায়,
দুদিন পরেই নতুন বছর তেইশ!
সবাই এখন তোর কথা ভুলে ব্যাস্ত
নতুন বছরের প্রস্তুতি নিতে।
তবে তুই কিন্তু থেকে যাবি
স্মৃতির বাইশ “মেঘপরিতে”।।

ইতি,
স্মৃতিতে বাইশ

অনেক করে গোবিন্দ’র বলার পর আর অনেক চেষ্টা করার পর শেষমেশ লিখতে বসেছি। বরাবরই চেষ্টা করেছি নতুন ভাবে নতুন কিছু করার তাই ভুল-ত্রুটি নিজগুণে মার্জনা করবেন🙏।

Please rate this Post

No ratings yet.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *