আত্মহত্যা – পঙ্কজ মন্ডল

আত্মহত্যা - পঙ্কজ মন্ডল Meghpori

আত্মহত্যা
পঙ্কজ মন্ডল

মেট্রো করে অফিস থেকে ফিরছিল পলাশ। রোজই ফেরে, প্রায় ৪-টে স্টেশন।
যাত্রীদের মধ‍্যে চোখ বোলাতে বোলাতে এক জায়গায় আটকায় সে, কেমন যেন চেনা চেনা লাগে তার। নিমেষের মধ্যে কতগুলো ছবি ভেসে ওঠে অতীতের কোন এক কুজ্ঝটিকা, এ কোথাও যেনো হারিয়ে যায় পলাশ। মনের অতল প্রান্তের শুকনো গহ্বর থেকে কোনো ধোঁয়াশাকৃত মনোরম মুহুর্ত।
গালে একটা চাপ অনুভব করে পলাশ,.. হুশ ফেরে তার।

একরাশ খিল খিলে হাঁসির সঙ্গে কতো গুলো শব্দ ওঠে…
— কীরে চিনতে পারছিস?
— মেঘা..!?
— বা পেরেছিস তাহলে, নইলে আজকাল কেমন অদৃশ্য অদৃশ্য লাগে।
— হুম তা লাগবে না..
— অমন হাকরে কী ভাবছিলি..
— ভাবনার কী আর অন্ত আছে..
…আরও একটা চর মারে মেঘা..
— ফোন করিসনি কেনো ?
বেঁচে আছি, নাকি কেলাফতে.., সে খবর টুকুন ও নিসনি..
কিছুক্ষণ চুপ থেকে পলাশ বলে
— সবই আমার দোষ..
..আরো একটা চড় কশায়ে মেঘা।..
— আজেবাজে বকলে এক চড় মারবো..
মেঘার দিকে তাকায় পলাশ..
কোঁকড়ানো চুল, আজ আরো কোঁকড়ানো, ছোট্ট কপালে কয়েকটা ঘামাচি। শুক্ন পীরিতো কালো ছোপ যুক্ত বাদামি চোখ। দৈহিক গঠনের ভাঙোন ধরেছে বেশ। যেনো জীবনের অতন্ত নির্মম পথ পার করে আর ধকল টানতে পারছেনা…
তবুও সব কষ্ট চাপা দিয়ে অদ্ভুত এক মায়াময় হাসি
স্টেশন এসে গেল পলাশের। দরজা খুলতেই নেমেপরে সে, মেঘাও নেমেছে। প্রায় খালি স্টেশন।
একূটা বেঞ্চিতে গিয়ে বসে তারা।
একথা সেকথা মধ‍্যে হারিয়ে যায় দুইজনে।

পলাশের জীবনে প্রথম মেয়ে ছিলো মেঘা। খুবই গাড় ছিল তাদের বন্ধুত্ব। যখন দ্বাদশ-এর পর ক্রমাগত দূরত্ব বৃদ্ধি পায়, তখন একে অপরের একাকীত্বের সঙ্গী ছিলো তারা।
কথা বলতে বলতে অদ্ভুদ দৃশ‍্য ফুটে ওঠতে থাকে।
এক হল ভর্তি ছাত্র-ছাত্রী মেঝের উপর বসে, দুপাশে দুধারে কিছু উচুঁ বেঞতে বড়ো বড়ো বোর্ডের পিছনে চলতো তাদের লীলা, চোখের ইশারার মাধ্যমে মনের ভাবের আদান প্রদান।
পলাশ ছিল অদ্ভুত লাজুক প্রকৃতির। মেঘার দিকে তাকালেই তার গাল লাল হয় যেত।
মেঘা লুকিয়ে এসে হঠাৎ করেই পলাশের পাশে বসে পড়তো, অমনি পলাশ উঠে যেতো অপর প্রান্তে।
যখন ফোন নাম্বার চেয়ে ছিল তখন তো একেবারেই নাজেহাল অবস্থা!…
চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকে পলাশ, মুখে হাসি ফুটে ওঠে তার..
পলাশের অজান্তেই মেঘা উঠে লাইনের ধারে চলে এসেছে। টানেলের মধ্যে ট্রনের আলো দেখা যায়।
হঠাত্ একটা আর্তনাদ মেশানো বিভৎসো শব্দ..

পলাশ চোখ খুলে মেঘাকে না দেখতে পেয়ে, শব্দটা লক্ষ্য করে আতঙ্কে চেঁচিয়ে বলে…
— মেঘা..!!
ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে অনেক..

Please rate this Post

5/5 (3)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *